বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ রাউজান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার উদ্যোগে আসছে আগামী 09ই নভেম্বর পবিত্র শোহাদায়ে কারবালা ও হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহির)’র ফাতিহা উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা। এতে সকলের প্রতি দ্বীনি দাওয়াত রইল।
Gausia Committee Dawat Card

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

রাহনুমায়ে শরীয়ত ও ত্বরীক্বত হযরতুল্ আল্লামা আল্হাজ্ব

সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল্ আলী-এর

বংশগত শাজরা

بسم الله الرحمن الرحيم
১। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
২। হযরত ফাতেমাতুজ্জাহ্রা(রা.) সহধর্মিনী হযরত আলী
৩।  হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)
৪।  হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)
৫।  হযরত ইমাম বাক্বের (রা.)
৬।  হযরত ইমাম মুহাম্মদ জাফর সাদেক্ব (রা.)
৭।  হযরত সৈয়্যদ ইসমাইল (রা.)
৮।  হযরত সৈয়্যদ জালাল (রা.)
৯।  হযরত সৈয়্যদ শাহ্ ক্বায়েম (কায়েন) (রা.)
১০। হযরত সৈয়্যদ জাফর (ক্বা’ব) (রা.)
১১।  হযরত সৈয়্যদ ওমর (রা.)
১২। হযরত সৈয়্যদ গফ্ফার (রা.)
১৩। হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীসুদারাজ (রা.)৪২১ হিঃ
১৪। হযরত সৈয়্যদ মাসুদ মাস্ওয়ানী (রা.)
১৫। হযরত সৈয়্যদ তাগাম্মুজ্ শাহ্ (রা.)
১৬। হযরত সৈয়্যদ ছুদুর (রা.)
১৭। হযরত সৈয়্যদ মুছা (রা.)
১৮। হযরত সৈয়্যদ মাহ্মুদ (রা.)
১৯। হযরত সৈয়্যদ আবর্দু রহিম (রা.)
২০। হযরত সৈয়্যদ আবদুল গফুর (রা.)
২১। হযরত সৈয়্যদ আবদুল জালাল (রা.)
২২। হযরত সৈয়্যদ আবদুর রউফ (রা.)
২৩। হযরত সৈয়্যদ আবদুল করিম (রা.)
২৪। হযরত সৈয়্যদ আবদুল্লাহ্ (রা.)
২৫। হযরত সৈয়্যদ গফুর শাহ্(রা.) (প্রকাশ-কাপুর শাহ্ সিরিকোট)
২৬। হযরত সৈয়্যদ নফ্ফাস্ শাহ্বা তাফাহ্হুছ্ শাহ্ (রা.)
২৭। হযরত সৈয়্যদ আবী শাহ্ মুরাদ (রা.)
২৮। হযরত সৈয়্যদ ইউসুফ শাহ্ (রা.)
২৯।হযরত সৈয়্যদ হোসাইন শাহ্(হোসাইন খিল্)(রা.)
৩০। হযরত সৈয়্যদ হাজী হাসেম (রা.)
৩১। হযরত সৈয়্যদ আবদুল করিম (রা.)
৩২। হযরত সৈয়্যদ ঈসা (রা.)
৩৩। হযরত সৈয়্যদ ইলিয়াছ (রা.)
৩৪। হযরত সৈয়্যদ খোশ্হাল (রা.)
৩৫। হযরত সৈয়্যদ শাহ্ খাঁন (রা.)
৩৬। হযরত সৈয়্যদ কাজেম (রা.)
৩৭। হযরত সৈয়্যদ খানী জামান শাহ্ (রা.)
৩৮। হযরত সৈয়্যদ ছদর শাহ্ (রা.)
৩৯। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রা.)
৪০। হযরত সৈয়্যদ  মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ  (রা.)
৪১। (ক) হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (ম.)
(১)  সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাশেম শাহ্ (ম.)
সৈয়্যদ মুহাম্মদ মাশহূদ শাহ্ (ম.)
সৈয়্যদ মুহাম্মদ মামূন শাহ্   (ম.)
(২) সৈয়্যদ মুহাম্মদ হামেদ শাহ্ (ম.)
সৈয়্যদ মুহাম্মদ শহীদ আহমদ শাহ্
(৩) সৈয়্যদ মুহাম্মদ আহমদ শাহ্ (ম.)
(খ) হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ ছাবের শাহ্ (ম.)
(১) সৈয়্যদ মুহাম্মদ মাহমূদ শাহ্ (ম.)
(২) সৈয়্যদ মুহাম্মদ আক্বিব শাহ্ (ম.)

 গাউসিয়া কমিটি সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন www.facebook.com/gcbruc

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ

কী ও কেন?

প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য
হাদীস শরীফের পবিত্র ভাষ্য অনুসারে মুসলমানরা ৭৩ দলে বিভক্ত হয়েছে বা হয়ে থাকবে। এর মধ্যে ৭২ দলই জাহান্নামী। শুধুমাত্র একটি দলই জান্নাতি। ইসলামের একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল তথা মূলধারার নাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত। [সূত্র: মোল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত, শরহে মিশকাত]
হানাফী, শাফে’ঈ, মালেকী ও হাম্বলী-এ চার মাযহাব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’র এক একটি শাখা বিধায় নাজাতপ্রাপ্ত মূলধারার অন্তর্ভুক্ত। ঠিক তেমনি ক্বাদেরিয়া, চিশতিয়া, নক্বশ্‌বন্দিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া ইত্যাদি ত্বরিকাগুলোও একই শ্রেণীভুক্ত আধ্যাত্মিক ধারা। এসব ত্বরীকার মানুষগুলো কেউ হানাফী, কেউ মালেকী এভাবে কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী সুন্নী মুসলমান। এর বাইরের অর্থাৎ সুন্নী মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত মানুষগুলোই পথভ্রষ্ট বা জাহান্নামী ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত। হযরত বড়পীর গাউসুল আজ্ঞযম আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জন্মগ্রহণ করেন ৪৭০ হিজরিতে। অর্থাৎ রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জন্মের প্রায় পাঁচশত বছর পরে। অথচ এ সময়েই ইসলামের নামে ভ্রান্ত ৭২ দলের আবির্ভাব পূর্ণ হয়ে যায়। গাউসুল আ’যম জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু স্বলিখিত গুনিয়াতুত্‌ তালেবীন’ নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে উক্ত হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতই একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল। অন্যান্য ৭২ দল জাহান্নামী। তিনি সুন্নী জামাত’র পরিচয়ের সাথে সাথে পাশাপাশি ৭২ দলের পরিচয়সহ একটি তালিকা প্রদান করেন। ওই ৭২ দলে খারেজী, রাফেযী, শিয়া, মু’তাযিলা, ক্বদরিয়া, জবরিয়া, মুশাব্বেহা ইত্যাদি মূল বাতেল দল ও এদের শাখা-প্রশাখাগুলোর নাম রয়েছে। সব মিলিয়ে গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তাজ্ঞআলা আনহু’র সময়ে বাতিলের সংখ্যা ৭২ পূর্ণ হয়। ফলে ওই সময়ে ৭২টি ভ্রান্ত দল-উপদলের সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে একটি মূলধারার এমন নাজুক এবং মুমূর্ষু অবস্থা বিরাজ করছিলো যে, একে রক্ষা করতে এমন মহান সংস্কারকের আগমন অপরিহার্য হয়েছিলো। ঠিক এই সময়েই হযরত বড়পীর জীলানীর আগমনে এবং তাঁরই পরিচর্যায় ইসলাম পায় নতুন জীবন। যে কারণে গাউসুল আ’যম জীলানীর অপর নাম হলো ‘মুহীউদ্দীন’ অর্থাৎ দ্বীনকে পূনর্জীবনদানকারী। এ সংক্রান্ত অলৌকিক ঘটনাটি হলো- গাউসে পাক বাগদাদের রাস্তায় চলার পথে দেখলেন এক বৃদ্ধ রোগাক্রান্ত মুমূর্ষু মানুষ তাঁকে আহ্বান করছে সাহায্যের জন্য। গাউসে পাক ওই মরণযাত্রীকে টেনে তুলে দাঁড় করাবার জন্য ম্পর্শ করতেই লোকটি অলৌকিকভাবে সুস্থ সবল নওজোয়ান হয়ে যায়। গাউসে আ’যম এ ঘটনায় অবাক হয়ে এর কারণ জিঞ্চেস করলে লোকটি উত্তর দিলো আরো অলৌকিকভাবে যে, ‘আমি কোনো মানুষ নই’ মূলতঃ পাঁচশ বছর পূর্বে আপনার পূর্বপুরুষ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে দ্বীন ইসলাম রেখে যান আমি তারই প্রতিরূপ, যা এমন মুমূর্ষু অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু আজ আপনার হাতে এ মুমূর্ষু দ্বীন লাভ করলো পুনর্জীবন।   [বাহ্‌ছাতুল আসরার]
হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী তাঁর ‘শামায়েলে এমদাদীয়া’য় গাউসুল আ’যম দস্তগীর রাদ্বিয়াল্লাহু তাজ্ঞআলা আনহুকে ‘দ্বীনের ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারকারী’ বলে মন্তব্য করেন- যা ‘মুহীউদ্দিন’ উপাধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ‘দ্বীনের ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারকারী’ তথা দ্বীনকে পূনর্জীবন দানকারী ‘মুহীউদ্দীন’ গাউসুল আ’যম আবদুল কাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুঞ্চর মহান আদর্শ এই সমাজে বাস্তবায়নের জন্যই মূলতঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’। অপর কথায় বলা যায়, গাউসুল আ’যম কর্তৃক পুনর্জীবিত এবং প্রদর্শিত পথ ও মতকে সমাজে মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্যই ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কী এই পথ, মত বা আদর্শ? গাউসে পাকের ‘গাউসিয়াত’-এর এ আদর্শকে তাঁর কর্মময় জীবন, লেখালেখি ও বক্তব্য-মন্তব্যের আলোকে বিশ্লেষণ করলে আমরা তিনটি অলঙ্ঘনীয়, কর্মসূচী দেখতে পাই- ১. ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-এর আদর্শ তথা ‘সুন্নিয়াত’-এর প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করা। ২.ইসলামের নামে আবির্ভূত বাতেল দল এবং ভ্রান্ত মানব গড়া মতবাদ (যেমন গ্রীক দর্শন)-এর মূলোৎপাটন, এবং ৩. আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে খোদা তালাশের একটি সহজ পথ ‘সিলসিলাহ আলীয়া কাদেরিয়া’র পথ প্রদর্শন। গাউসে পাক উক্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেতৃত্ব দিয়ে এবং সংস্কার করে দ্বীনকে পুর্নজীবন দিয়ে গেছেন- যা পরবর্র্র্তীতে তাঁর প্রতিনিধি তথা খলীফাগণের পরিচর্যায় দুনিয়ার দেশে দেশে অনুসৃত ও প্রদর্শিত হয়ে দ্বীন ইসলামের সংরক্ষণ ও পরিধিবৃদ্ধিকে নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ বিংশ শতাব্দিতে, গাউসে পাকের যে প্রতিনিধির সংম্পর্শে এসে সুন্নিয়াত ও ত্বরীক্বতের আলোকে অধিকতর আলোকিত হয়েছেন তিনি শাহানশাহে সিরিকোট, পেশ্‌ওয়োয়ে আহলে সুন্নাত এবং ‘সৈয়্যদুল আউলিয়া’ হিসেবে হিসেবে। তিনি হলেন আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী পেশোয়ারী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি। বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে দরবারে আলীয়া ক্বাদেরিয়া, সিরিকোট শরীফ তাঁর ঠিকানা।
সেখানেই ১৮৫৬-৫৭ঞ্চর দিকে তাঁর জন্ম এবং ১৯৬১ সনে (১১ জিলক্বদ ১৩৮০হিজরি) ইন্‌তিক্বাল করেন। রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ৩৯ তম অধঃস্তন পুরুষ সৈয়্যদ  আহমদ শাহ্‌ সিরিকোটী তাঁর পূর্বপুরুষ আহলে বায়তদের অনুসরণে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে দ্বীনের মশাল হাতে নিয়ে প্রথমে হিজরত করেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানেই স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ বিধর্মীদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে নবদীক্ষিত মুসলমানদের ইবাদতের জন্য ১৯১১ সনে সেখানকার প্রথম জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। শুধু তাই নয়, পারস্য থেকে একদল শিয়া ধর্ম প্রচারক তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারে গিয়েছিলো সেখানে, কিন্তু হযরত সৈয়্যদ আহমদ পেশোয়ারী’র নেতৃত্বে সেখানে সুন্নিয়াতই শুধু স্থান পায় এবং শিয়া সম্প্রদায় প্রভাব বিস্তারে ব্যর্থ হয় (Dr. Ibrahim M Mahdi, A Short History to the Muslims in Sounth Africa) গাউসে পাক যেভাবে ইসলামের মূলধারা সুন্নিয়াতকে শিয়া ইত্যাদি মতবাদের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন ঠিক তেমনি সিরিকোটী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হিও আফ্রিকায় বাতিল সম্প্রদায়ের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে তাঁর দ্বীন প্রচারের কর্মসূচি শুরু করেন জীবনের প্রথম ভাগে। এরপরই তিনি গ্রহণ করলেন গাউসে পাক প্রতিষ্ঠিত সিল্‌সিলাহ্‌ -এ আলিয়া ক্বাদেরিয়া’র শিষ্যত্ব। তাঁর পীর-মুর্শিদ গাউসে দাওরাঁ হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি’র খিদমতে তিনি নিজের আমিত্ব, অহঙ্কার বিসর্জন দিয়ে ত্বরীকতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খেলাফত লাভে ধন্য হন এবং পীরের নির্দেশে সুন্নীয়ত ও ত্বরীকতের এ মিশন হাতে নিয়ে ১৯২০ সনে তশরীফ নিয়ে যান সুদূর রেঙ্গুনে।
দীর্ঘ দুই দশকের রেঙ্গুন জীবন (১৯২০-১৯৪১) -এর এক পর্যায়ে তিনি তাশরীফ আনলেন বাংলাদেশে। এখানে তিনি এই মিশনের জন্য কাজ করেন ১৯৩৫-১৯৬১ অর্থাৎ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। ১৯২৫ সনে তাঁর পীর সাহেব হযরত খাজা চৌহরভী’র ইন্তেকালের পর থেকে স্বদেশের হরিপুরে প্রতিষ্ঠিত ‘দারুল উলুম রহমানিয়া’ (১৯০২) কে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। এ বছর (১৯২৫) থেকেই তিনি আপন পীরের প্রধান খলিফা হিসেবে শরিয়ত ও ত্বরীকতের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং এ দায়িত্বকে যথাযথভাবে আঞ্জাম দিতে বিশেষতঃ সুন্নীয়তের প্রচার-প্রসার, বাতিল পন্থীদের স্বরূপ উন্মোচন এবং ক্বাদেরিয়া ত্বরীকা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব গাউসুল আ’যম জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র পক্ষ থেকে সিলসিলাহ পরম্পরায় তাঁর উপর অর্পিত হয়। এমন কর্মসূচীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় তাঁর সাধারণ মুরীদ-ভক্তদেরও অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের দুনিয়া-আখিরাত উজ্জ্বল করতে, বিশেষত সংশ্লিষ্ট সমাজকে আলোকিত করতে তিনি রেঙ্গুনে প্রতিষ্ঠা করেন এ সিলসিলাহর প্রথম সংগঠন-‘আনজুমানে শূরা-এ রহমানিয়া’ (১৯২৫)। এই সংগঠনের ব্যবস্থাপনায় রহমানিয়া মাদরাসা এক বিশাল দ্বীনি মারকাযে পরিণত হয়। বিশেষ করে তাঁর পীর খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি, জীবনে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ ছাড়া মাত্র ৭ বছর বয়সে স্বীয় আব্বা হুযুর গাউসে যামান খাজা ফক্বীর মুহাম্মদ খিদ্ব্‌রীর স্থলাভিষিক্ত হন, অথচ জীবন সায়াহ্নে এসে এমন এক উচ্চ মানের আরবী ভাষার দরূদ গ্রন্থ লিখে যান, যা এই দুনিয়ায় এক অদ্বিতীয় গ্রন্থ মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল নামে পরিচিত।
আল্লাহ্‌র কালাম আল কুরআন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু তাজ্’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের সহীহ হাদীস সংকলন বোখারী শরীফের পর, এটিই কোনো মানুষের রচিত ৩০ পারা সম্বলিত গ্রন্থ যার প্রতিটি পারায় রয়েছে ৪৮ পৃষ্ঠা করে। আর এ গ্রন্থটি হলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু তাজ্’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সৃষ্টি, যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও গুণাগুণ-জাত-সিফাত এবং আক্বীদা ও আমলের বর্ণনাসহ দুরূদ-সালামের এক অপূর্ব বর্ণনা সম্ভার। আর এ বিরল গ্রন্থটি চার হাজার টাকা ব্যয়ে ছাপিয়ে ছিলো আজ থেকে আশি বছর আগে এ ‘শূরা-এ রহমানিয়া’। হুযূরের চট্টগ্রাম আগমনের সাথে সাথে চট্টগ্রামবাসী রেঙ্গুনের মুরীদদের নেতৃত্বে ১৯৩৭ সনে গঠিত হয় ‘আনজুমান-এ শূরায়ে রহমানিয়া চট্টগ্রাম শাখা’। এরই ব্যবস্থাপনায় এখানে চলতে থাকে ত্বরীকতের প্রচার-প্রসার এবং রহমানিয়া মাদরাসার সহযোগীতা।
হুযূর ক্বেবলা চ-গ্রাম এসে দেখলেন খারেজী সম্প্রদায়ের উত্তরসূরীরা এখানে বেশ তৎপর। এরা প্রতিনিয়ত নবী-ই আকরামের দুরূদ-সালাম এবং সম্মান বিরোধী বক্তব্য প্রচার করে মুসলমানদের ঐক্য এবং ঈমান আক্বীদা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু এদের এ ঈমান বিধ্বংসী অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন সাচ্চা আলিম বলতে এক ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাযী শেরে বাংলা ছাড়া তেমন কেউ নেই। তাছাড়া, ভ্রান্তমতবাদীদের প্রাতিষ্ঠানিক মোকাবেলার জন্য বিদ্যমান মাদরাসাগুলোও যথেষ্ট নয়। অধিকন্তু চ-গ্রামের বাঁশখালীর শেখের খিলে তাঁর এক মাহফিলে তিনি ইন্নাল্লা-হা ওয়ামালা-‌ই-কাতুহু ইয়ূসাল্লূ-না আলান্‌নবীয়্যি, এয়া আইয়্যুহাল্‌ লাযী-না আ-মা-নূ সাল্লূ- ’আলায়হি ওয়াসাল্লিমূ- তাসলী-মা’ এ আয়াতে করীমা তেলাওয়াতের পর সমবেত স্থানীয় অধিবাসীরা দুরূদ শরীফ তো পড়ে নি; বরং বেয়াদবী করেছিলো। এ ঘটনার পরই হুযূর ক্বেবলা দুরূদ-সালাম বিরোধী নবীর এ দুশমনদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন এবং চট্টগ্রামের ষোলশহরে ১৯৫৪ সনে প্রথমে ‘মাদরাসা -এ আহমদিয়া সুন্নিয়া’র বুনিয়াদ স্থাপন করেন এবং পরে ১৯৫৬ সনে একে অপ্রতিদ্বন্দ্বী সর্বোচ্চ দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার জন্য উক্ত নামের সাথে ‘জামেয়া’ (অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়) শব্দটি যোগ করেন। সাথে সাথে বেলায়তী কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘কাম করো দ্বীন কো বাঁচাও, ইসলাম কো বাঁচাও, সাচ্চা আলিম তৈয়ার করো।’ যে দ্বীন ইসলামকে একদিন বাঁচিয়ে ছিলেন হুযূর  গাউসুল আ’যম আবদুল কাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু (৪৭০-৫৬১হিজরী) আজ আবারো ‘দ্বীন কো বাচাও’ ঘোষণা করলেন তাঁরই যুগশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী (১২৭৬-১৩৮০হিজরী) প্রায় নয়শত বছর পরে এই চট্টগ্রামে। তিনি আরো ঘোষণা করলেন- ‘মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো মাদরাসা কো দেখো, মুঝসে মুহাব্বত হ্যায় তো মাদরাসাকো মুহাব্বত করো।’ (আমাকে দেখতে চাইলে মাদরাসাকে দেখো, আমার সাথে ভালবাসা রাখতে চাইলে মাদরাসাকে ভালবাসো।)
তিনি শুধু মাদ্‌রাসা বানিয়েই ক্ষান্ত হন নি বরং প্রত্যেকের মুহাব্বতের পূর্বশর্ত হিসেবে মাদ্‌রাসার মুহাব্বতকেও ঘোষণা করে দিয়েছেন, যাতে মুরীদ-ভক্তগণ দ্বীনি খিদমতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্বীন রক্ষার অতন্ত্র্র প্রহরী ‘সাচ্চা আলিম’ তৈরিতে উৎসর্গিত হয়ে যায়। হয়েছিলোও তাই। ফলে আজ এ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া দেশের শীর্ষস্থানীয় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবং সুন্নিয়াতের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
১৯৫৬ সনে আঞ্জুমানে শূরা-এ রহমানিয়াকে করা হলো-‘আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ নামে। এখন থেকে সুন্নিয়াত ও ত্বরীকতের মিশন ব্যবস্থাপনায় মাঠে নামে এই ‘আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ যার আজীবন সভাপতি স্বয়ং হুযূর ক্বেবলা।
শাহানশাহে সিরিকোট’র ইন্তিকালের পর হতে আজীবন সভাপতির এ দায়িত্বে আসেন তাঁরই সাহেবযাদা, মাতৃগর্ভের ওলী ন্যামে খ্যাত আল্লামা হাফেয সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ। হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্‌কে ১৯৫৮ সনে এই চট্টগ্রামেই জনসম্মুখে খেলাফত দেওয়া হয় এবং আন্‌জুমানের নীতি নির্ধারণী কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে থেকে গাউসে পাকের এই মিশনের লাগাম থাকে গাউসে যামান সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ’র হাতে, যিনি এই প্রতিষ্ঠানকে এবং এর কর্মসূচীকে দিয়েছেন আরো বেশি ব্যাপকতা। তাঁর হাতে ত্বরীকতভুক্ত হন লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ। তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকার মুহাম্মদপুরের ক্বাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া, চন্দ্রঘোনার (চট্টগ্রাম) তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া এবং হালিশহরের (চট্টগ্রাম) তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া’ সহ অনেকগুলো মাদরাসা, খানক্বাহ এবং মসজিদ। ফলে, দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাঁর লক্ষ লক্ষ মুরীদ ভক্তদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হলো মাদ্‌রাসার খেদমত করার মাধ্যমে ‘সাচ্চা আলেম’ তৈরির নির্দেশ পালনের। হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহর নির্দেশে ১৯৭৬ সনের ১৬ ডিসেম্বরে এক সভায় ‘তরজুমান’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৫ সন থেকে তাঁরই নির্দেশে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে ‘জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মতো একটি শরীয়ত সম্মত বর্ণাঢ্য মিছিলের কর্মসূচী; যাতে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ শামিল হয়ে এ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সংস্কারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। বিশেষ করে গাউসে পাক’র স্মরণে প্রতি মাসের গেয়ারভী শরীফ এবং খতমে গাউসিয়া শরীফসহ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি’র যুগান্তকারী মসলকে আ’লা হযরত প্রচার-প্রসারের যে যাত্রা হযরত সিরিকোটী হুযূরের হাতে শুরু হয় তা তাঁর হাতে লাভ করে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। মোট কথা ১৯৮৬ পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই গাউসে পাকের এই কাফেলায় শামিল হয় দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ। দেশের আনাচে কানাচে চলতে থাকে এ মিশনের কার্যক্রম। এ বিশাল কর্মী বাহিনীকে একটি সাংগঠনিক শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করে, দ্বীনের সাহায্যের কাজে নিয়োজিত করে তাদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গাউসে যামান তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি ১৯৮৬ সনে নির্দেশ দিলেন ‘গাউসিয়া কমিটি’ প্রতিষ্ঠা করতে।
এরই বাস্তবায়নে ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠিত হলো। দেশব্যাপী এমন কি সুদূর মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত এটা ব্যাপৃত হলো। বর্তমানে এর লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থকদের হাতে এলাকায় এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে সুন্নিয়াত প্রচার, বাতিলের পথরোধ এবং ক্বাদেরিয়া ত্বরীকা প্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ
একটি সমাজ সংস্কার মূলক অরাজনৈতিক আন্দোলন। সমাজ সংস্কারের পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ; অর্থাৎ যারা এই সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব দেবে প্রথমে তাদের আত্মশুদ্ধি নিশ্চিতকরণ। এজন্যে গাউসিয়া কমিটির পরিকল্পনা হলো- ১. গাউসুল আ’যম জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সিল্‌সিলাহর কামিল প্রতিনিধির হাতে বায়’আত ও সবক গ্রহণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এ পাঠশালায় অন্তর্ভুক্তকরণ। ২. গাউসিয়া কমিটির সদস্য বানিয়ে তাদেরকে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা ধীরে ধীরে আমিত্ব, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও অহঙ্কারমুক্ত পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে পরিণত হয়। ৩. সুন্নীয়তের আক্বীদা এবং ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির সাথে সাথে উভয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় মৌলিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নেতৃত্বের উপযোগী কর্মি হিসেবে গড়ে তোলা। ৪. সুন্নীয়ত ও ত্বরীকতের দায়িত্ব পালনে, বিশেষতঃ মাদরাসা, আনজুমান এবং মুর্শিদে বরহক্বের নির্দেশের প্রতি আস্থাশীল এবং মুর্শিদের বাতলানো পথে নিবেদিত হয়ে নবী প্রেমিক এবং খোদাপ্রাপ্তির পথ সুগম করার অনুশীলনে নিরলসভাবে এগিয়ে চলার শপথ গ্রহণ করা।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে গড়ে উঠা গাউসিয়াতের কর্মী বাহিনীর হাতে এ সমাজের পরিশুদ্ধির দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ বর্তমানে এ সমাজ, রাষ্ট্র এবং  সমগ্র বিশ্বে অশান্তির পেছনে যে কারণটি প্রধান তা তাহলো অযোগ্য, অশুদ্ধ, লোভী, হিংসুক, অহংকারী এবং দাম্ভিক ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সমাজ রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়া। বদ-আক্বীদা এবং ক্বোরআন সুন্নাহ বিরোধী শিক্ষা ও চেতনাসম্পন্ন নেতারা সমাজকে ধীরে ধীরে জাহেলিয়াতের দিকেই নিয়ে গিয়েছে। তাই জাহেলিয়াত দূর করে আবারো ইসলামের দিকে এ সমাজকে যারা নিয়ে আসবে, আগে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে আলোকিত মানুষ হিসেবে। এ আলোকিত নেতাদের বাতি থেকে হাজার হাজার বাতি প্রজ্জ্বলিত হয়ে সমস্ত অন্ধকার দূর হবে। তাই, গাউসিয়া কমিটির পরিকল্পনা হলো প্রথমে পরিশুদ্ধ নেতা সৃষ্টি করা এবং পরে তাদের দিয়ে সমাজ শুদ্ধি করণ নিশ্চিত করা।
সিল‌সিলাহ্‌র মাশায়েখ হযরাত প্রদত্ত ফজর, মাগরিব এবং এশা নামাজান্তে পঠিতব্য সবক জিকির, দরূদ ও সালাতে আওয়াবীন আদায় করা হয় নিজের আত্মার উন্নয়নের জন্য, আর গাউসিয়া কমিটির কর্মসূচি বাস্তবায়নের সবক ও নির্দেশ হলো সমাজের বহুমুখী উন্নয়নে। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী তাঁর পীর খাজা চৌহরভীর খিদমতে খোদা তালাশের জন্য পাহাড়ে জঙ্গলে ইবাদতে মশগুল হবার অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু পান নি; বরং পীর সাহেব ক্বেবলা বলেছিলেন, একা একা খোদা তালাশের চেয়ে সমাজের অন্যান্য মানুষকে পথ দেখানোর কাজে নিয়োজিত থাকা অনেক উত্তম। সাথে সাথে নির্দেশ দেওয়া হলো রেঙ্গুনে গিয়ে মানব সেবা ও দ্বীনি সংস্কারে নেতৃত্ব দিতে। সে নির্দেশ তিনি ১৯২০ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত রেঙ্গুন ও বাংলাদেশে যথাযথভাবে পালন করেছেন। আর সেই একই মিশনের এক একজন কর্মী হবার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র সদস্যদের। সুতরাং বুঝতে হবে যে, গাউসে পাক শায়খ আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তাজ্ঞআলা আনহু যেভাবে দ্বীনের পুনর্জীবনের জন্য শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ হিসেবে এসেছিলেন ঠিক তেমনি তাঁর এ মিশনের যুগশ্রেষ্ঠ খলীফা শাহানশাহে সিরিকোটী  এবং গাউসে যামান তৈয়্যব শাহঞ্চর আগমনও হয়েছে দ্বীনি সংস্কারের মাধ্যমে এ সমাজ শুদ্ধি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে। গাউসিয়া কমিটির সদস্যগণ হলেন এ আন্দোলনের এক এক পর্যায়ের এক এক জন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বন্ধু আউলিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কে বলেছেন,
‘আলা— ইন্না আউলিয়া-অৎল্লাহি লা-খাওফুন আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহযানূ-ন, আল্লাযী-না আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাক্বূন, লাহুমুল বুশরা- ফিল হায়া-তিদ্ দুনিয়া ওয়া ফিল আ-খিরাহ্‌।
অর্থাৎ জেনে রাখ! নিশ্চয়ই ওলীগণের কোন ভয় নেই এবং দুঃখও নেই। যাঁরা ঈমান এনেছে এবং পরহেযগারী অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে রয়েছে সুসংবাদ. [আল-ক্বোরআন]
যাদের ঈমান আক্বীদা এবং আমলী যিন্দেগী পরিশুদ্ধ ও উত্তম তাঁরাই আল্লাহর বন্ধু তাঁদের দুনিয়া এবং আখিরাতে রয়েছে অভয়, সুখ আর সুসংবাদ।
গাউসিয়া কমিটি এমন একদল মানুষই সৃষ্টি করতে চায়- যারা ঈমান আক্বীদা, তাক্বওয়া অর্জন এবং প্রতিষ্ঠায় অপ্রকাশ্য শত্রু নাফ্‌সে আম্মারার এবং সামাজিক শত্রু বাতিল সম্প্রদায়ের সাথে যুগপৎ জেহাদে নিয়োজিত সাহসী সৈনিক হিসেবে কাজ করবে। তারা একদিকে ক্বাদেরিয়া ত্বরিকাভুক্ত এবং অন্যদিকে গাউসিয়াতের সামাজিক আন্দোলনের কর্মী হবার কারণে স্বয়ং গাউসুল আ’যম দস্তগীরের পক্ষ থেকেও অভয় বাণী ও সুসংসাদ পেয়েছেন। গাউসে পাক তাঁর এমন মুরীদদের উদ্দেশ্যে বার বার বলেছেন-মুরীদি লা-তাখাফ’ অর্থাৎ জ্ঞহে আমার মুরীদ! ভয় করো না’। একদিকে আল্লাহর অভয় বাণী, অন্যদিকে এই মিশনের মহান ইমাম গাউসুল আ’যমের জ্ঞঅভয়বাণী’ সংগঠনের কর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্যে এনেছে বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। এ জোয়ারই একদিন সব বাতিলের ভিত ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। কারণ, আল্লাহপাক ঘোষণা করেন-
ওয়াকূল জা—-আল হাক্ব্‌ক্বু ওয়া যাহাক্বাল বাতিল, ইন্নাল বা-ত্বিলা কা-না যাহূ-ক্বা [বলুন! সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, নিশ্চয়ই মিথ্যা অপসৃত হবারই। [আল-ক্বোরআন]
সত্যের নিশান হাতে এ ক্বাফেলার সফলতা অব্যাহত থাকবে-ইন্‌শাআল্লাহু তাআলা। শাহানশাহে সিরিকোট ও হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিও এ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। তা থাকবেও না কেন? এ কাফেলা তো ‘গাউসুল আ’যম’-এর কাফেলা। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নির্বাচিত উজির হিসেবে খোলাফা-ই রাশেদীন, হযরত হাসানাঈন-ই করীমাঈন, হযরত হাসান আসকারী হয়ে হুযূর গাউসুল আ’যম জীলানী দস্তগীর হয়ে ইমাম মাহদীর শুভাগমন পর্যন্ত বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত ‘গাউসিয়াত-ই কুব্রার ছায়া ধারাবাহিকভাবে একটি সত্যের কাফেলার উপর থাকবেই। সিহা সিত্তার হাদীস শরীফের ঘোষণানুসারে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ওই সত্যপন্থী কাফেলা (জমা‘আত)ই সব সময় বিজয়ী থাকবে। [ইবনে মাজাহ শরীফ]
এটা ওই গাউসে আ’যম দস্তগীর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর কাফেলা, যাঁর গর্দান শরীফ আল্লাহর সমস্ত ওলীর গর্দানের উপর, যাঁর পৃষ্ঠ মুবারক হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রফরফ শরীফ। সুতরাং গাউসিয়া কমিটি যেন ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হয়ে একদিন ইমাম মাহদী আলায়হিস্ সালাম-এর ফৌজ হিসেবে দ্বীন ও মাযহাব প্রতিষ্ঠা করবে, নিরাপদ থাকবে দাজ্জালসহ সব ধরনের ফিৎনা থেকে। বর্তমানে তো ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’ নামের এ সংগঠনটির প্রত্য পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন গাউসে পাকের দু’জন সুযোগ্য নায়েব আমাদের হুযূর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ সাহেব ও হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্ সাহেব ক্বেবলা।
সুতরাং আসুন, গাউসিয়া কমিটির সদস্য হোন! কমিটির বরকতময় কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করুন! এর মাধ্যমে জামেয়া, আঞ্জুমান, অগণিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার নিরেট দ্বীনী কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে উভয় জাহানের কামিয়াবী হাসিল করুন!
হুযূর কেবলা তাহের শাহ’র আধ্যাত্মিক প্রেরণা এবং পীর সাবের শাহ্’র মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নেতৃত্বে এ কাফেলা এগিয়ে চলছে দেশ থেকে দেশান্তরে কাল থেকে কালানান্তরে। তারা নির্ভয়ে এগিয়ে চলবে সকল বাধা বিপত্তি উপো করে, কারণ খোদ্ গাউসুল আ’যম জীলানী তাদের অভয় দিয়েছেন, ‘হে আমার মুরীদ ভয় করো না!’
সমাজ ও দ্বীনি সংস্কার
আত্মশুদ্ধি ও আত্ম প্রতিষ্ঠ যোগ্য কর্মিদের নিয়েই খিদমতের মাধ্যমে সমাজের সংস্কারের মহাব্রত পালনে এগিয়ে আসতে হবে। নিজে বাঁচ-তারপর পরিবারকে বাঁচাও, এ কুরআনী নির্দেশ অনুসরণ করে নিজ পরিবার, প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজন সহ সমাজের অন্যান্য মানুষের কাছে সত্য ও শান্তির বানী পৌঁছিয়ে  দেওয়াই এই মিশনের লক্ষ্য। এই লক্ষ্যের সর্বোচ্চ অর্জন নির্ভর করে এক ঝাঁক প্রশিক্ষিত জ্ঞদায়ীঞ্চ (দাওয়াত দাতা)ঞ্চর নিরন্তর প্রয়াস এবং যুগোপযোগি কর্মকৌশল নির্ধারণের উপর। আল্লাহ্‌ জাল্লা শানুহু এ সম্পর্কে এরশাদ করেন- জ্ঞউদ্‌উ ইলা সাবিলে রাব্বিকা বিল হিকমতে ওয়াল মাউয়েজাতুল হাসানাঞ্চ-অর্থাৎ  তোমরা মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় ডাক হিকমত (কৌশল) সহকারে এবং উত্তম উপস্থাপনার মাধ্যমেঞ্চ (আল-কুরআন)। আর তাই হিকমত ও উত্তম উপস্থাপনা শিক্ষা দিতে দরকার নিয়মিত কর্মি প্রশিক্ষণ। যে যত বেশি তাই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আয়ত্ব করে তা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ সাফল্য দেখাতে পারবে-তাকে ততবেশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করতে হবে। এভাবে সুন্দর কর্মকৌশল ও কর্মসূচির উপর ভিত্তি করে আদর্শ কর্মি বাহিনীর রুটিন ওয়ার্কগুলোর অতিসংক্ষেপ রূপরেখা হবে নিম্নরূপ।
দাওয়াত- দাওয়াতী দায়িত্ব পালনকারীরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। বলা হয়েছে- জ্ঞকুনতুম খায়রা উম্মতি উখরেজাত লিননাস তা মুরুনা বিল মারূফি ওয়াতান হাওনা আনিল মুনকারঞ্চ। এ আয়াতে এ সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে-যারা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে বিরত রাখার কাজে নিয়োজিত। আর একাজে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হলেন স্বয়ং আল্লাহর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। কুরআনে করিমে যাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে-জ্ঞ ইন্না আরসাল নাকা শাহেদাঁও ওয়া মুবাশ্বেরাঁও ওয়ানাযিরা ওয়া দায়ীয়ান ইলাল্লাহে বেইজনিহি ওয়া সেরাজাম মুনীরাঞ্চ- অর্থাৎ হে হাবিব! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী (হাজির-নাজর), সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে দাওয়াতদাতা হিসেবে এবং উজ্জ্বল আলোকবর্তিকারূপে।[আল কুরআন]
যুগে যুগে অন্যান্য নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং আহলে বাইত-অলিআল্লাহগণ জ্ঞদায়ীঞ্চর দায়িত্ব পালন করে এ পৃথিবীতে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়েছেন। তাই এ দায়িত্ব মূলত নবী আলাইহিস্‌ সালামগণের দায়িত্ব যা পালনের সুযোগ লাভ আমাদের জন্য সৌভাগ্যই বটে। এজন্য হুজুর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী একবার ঢাকা মুহাম্মদপুরস্থ কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া মাদরাসাস্থ খানকা শরীফের হুজরায়- গাউসিয়া কমিটির খিদমদ সম্পর্কে (এ অধমকে) বলেছিলেন- জ্ঞশুকরিয়া আদা করো কে আপ লোক আম্বিয়া আলাইহিস্‌ সালাম কা ডিউটি মে দাখেল হ্যায়ঞ্চ। অবশ্য এর সাথে সাথে একথাও বলেছিলেন যে-এ দায়িত্বকে যে যতটুকু কদর করবে (সম্মানের সাথে পালন করবে), সে ততটুকু ফায়দা লাভ করবে, আর বেকদরীর পরিণতিতে অর্থাৎ এ সুযোগের সদ্ব্যবহার না করলে তা কেড়ে নিয়ে অন্যকে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়- হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি তাজ্ঞআলা আলায়হি বলতেন- জ্ঞবাজি আগর চাহে তো সুকনা লাকড়ি সে ভি কাম লে সেকতাঞ্চ। সুতরাং  এ দায়িত্ব পালনকারী কোন নেতা-কর্মির আমিত্ব-অহমিকা বরং তার নিজের জন্যই বিপদজনক হবে। কারণ, আমাদের জ্ঞসাহেবে কাশফঞ্চ মাশায়েখগণ যে কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তি (শুকনা লাকড়ি) কে দিয়ে অধিকতর কাজ আদায়ের ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। তাই এ সংগঠনের দায়িত্ব প্রাপ্ত যোগ্য জ্ঞদায়ীঞ্চ (দাওয়াতদাতা)  আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে বদ্ধপরিকর। দাওয়াতের কয়েকটি ধরণ নিম্নরূপ:
গাউসিয়া তারবিয়াতি মজলিল
এ মজলিলে পঠিতব্য সিলেবাসভিত্তিক অনবদ্য গ্রন্থ হলো পবিত্র ক্বোরআনের তাফসীর ও ‘কানযুল ঈমান’ ও হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা মিরআত শরহে মিশকাত’। তারপর ‘গাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাব’। স্থানীয় গাউসিয়া কমিটি কিংবা বিদ্যমান পীরভাই বা শুভাকাঙ্খীদের উদ্যোগে ডাকা হবে এ মজলিশ। এতে দাওয়াত দেওয়া হবে সে সমাজের অন্যান্যদের। প্রতি সপ্তাহের সুবিধাজনক দিবস ও সময়ে এ মজলিশ কায়েম করতে সক্ষম হলে এক বা দুই বছরের মধ্যে কোন এলাকায় এই কিতাব খতম করা সম্ভব হবে। কোন এলাকায় এর খতম উপলক্ষে একটি আড়ম্বরপূর্ণ মাহফিলও আয়োজন করা যেতে পারে। এ মাহফিলে সর্বোচ্চ অংশ গ্রহণকারী এবং ঞ্চান আহরণকারী ব্যক্তিদের বাছাই করে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। সংগঠনের যে শাখা এ আয়োজনে যতবেশি সাফল্য দেখাতে পারবে তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে- যা এই শিক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মশালার সফল বিস্তারের সহায়ক হতে পারে। কর্মিদের মধ্যে যারা এ নেসাব আয়ত্ব করবে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেতৃত্বে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। জ্ঞগাউসিয়া তরবিয়াতি নেসাবঞ্চ পাঠের মজলিশ কী রূপ হবে তা উক্ত গ্রন্থে বর্ণিত আছে- পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনানুসারে একে আরো সুন্দরভাবে সাজানো যেতে পারে।
বিশেষ করে, এ সিলসিলাহর প্রতিটি খতমে গাউসিয়া এবং গেয়ারভী শরীফ মাহফিলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এ নেসাব পাঠের মজলিশকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কখনো স্থানীয় মসজিদ, কখনো স্থানীয় খানকাহ্‌ কিংবা কারো বাড়ি-ঘর এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিটি মজলিশে প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা যেতে পারে। যা উপস্থিত সকলের জন্য কল্যাণকর হতে পারে।
বছরে কমপক্ষে একবার দাওয়াতী সপ্তাহ বা দাওয়াতী পক্ষ বা দাওয়াতী মাস ঘোষণা করে সে মাগ্ধস ব্যাপক মানুষকে এ তরবিয়াতি মজলিশমুখী করার উদ্দ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। রমবানুল মুবারককে আমরা এ কাজের জন্য সুবিধাজনক সময় মনে করতে পারি।
উল্লেখ্য,জ্ঞগাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাবঞ্চ যাঁর নিদের্শে রচিত হয়েছে -তিনি হলেন হযরত পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। তিনি গাউসিয়া তারবিয়াতি মজলিশ এর দাওয়াত কার্যক্রমকে দাওরাহ-আ দাওয়াতুল খায়র (কল্যাণের পথে আহ্‌বান) নামকরণ করেছেন। তাঁর পরামর্শ অনুসারে গাউসিয়া কমিটির ভাইয়েরা প্রত্যেক নক্সশস্কৈংণবার বাদ মাগরিব মহল্লার কোন মসজিদে এ মজলিশ আয়োজন করবেথ। এবং এ উপলক্ষে উক্ত মসজিদের মুসল্লি এবং মহল্লার সর্বসাধারণকে বাদ আসর থেকে মাগরিবের আজানের পূর্ব পযর্ন্ত সময়ের মধ্যে জনে জনে সাক্ষাৎ করে মজলিশে উপস্থিত থাকার দাওয়াত জানাবে এবং কীভাবে উক্ত মজলিশকে সফলকাম করা যেতে পারে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন- এর কিয়দংশ জ্ঞগাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাবঞ্চ গ্রন্থটির শুরুতে প্রদত্ত হয়েছে। সুতরাং দাওরা-এ দাওয়াতুল খায়রকে আমাদের সাংগঠনিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করে-এ সংক্রান্ত হুজুর কেবলার উপরোক্ত দিক-নির্দেশনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
সেমিনার-ওয়াজ মাহফিল
বিভিন্ন উপলক্ষে বা বিষয়ে আমরা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম,ওয়ার্কসপ, আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করে ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’র চিন্তা-চেতনা, আক্বিদা-আমল, সংস্কৃতি প্রচার প্রসারে ভূমিকা রেখে আসছি। যা অনূৎশংণ ভৎকৎ প্রয়োজন। বিশেষত আয়োজনগুলো বিষয় ভিত্তিক গবেষণা মূলক আলোচনা হলে বেশি ফলদায়ক হতে পারে।
ত্বরিকতের দাওরা
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সিলসিলার দাওরা বিশেষত ত্বরিকতের নতুন ভাই বোনদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও নসীহতের ব্যবস্থা করা। এ ধরনের অনুষ্ঠান কোন অঞ্চলে হুজুর কেবলা’র মাহফিল এবং বায়াতী কার্যক্রম সম্পন্ন হবার অব্যবহিত পরেই করতে হয় যাতে নবাগত পীর ভাই-বোনরা তাদের জীবনের এ নতুন আধ্যাত্মিক অধ্যায় সুন্দর ও সহজভাবে গ্রহণ করে অগ্রসর হতে পারে। এ মাহফিগ্ধম সিলসিলাহঞ্চর সবক নসীহত, দ্বীনি খিদমত, আনজুমানের আনুগত্য করা এবং খতমে গাউসিয়া,গেয়ারভী শরীফ, মাদরাসা-খানকা পরিচিতি সহ প্রয়োজনীয় করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মাহফিলটি একই সাথে নুতন-পুরাতনদের পরিচিতি ও মিলন মেলা হিসেবে পরিণত হতে পারে।  একে আমরা পীর ভাই-বোনদের সম্মেলন নাম দিয়ে প্রতি বছর প্রতিটি কমিটির আওতায় অন্তত একবার আয়োজন করা উচিত  বলে মনে করি।
সাচ্চা আলেম তৈয়ার করো
এই সিলসিলাহঞ্চর মুরীদদের প্রতি আমাদের মাশায়েখ হযরতে কেরামের প্রধান বাণী হলো-‘কাম করো দ্বীন কো বাঁচাও, সাচ্চা আলেম তৈয়ার করো’। তাই সাচ্চা আলেম তৈরীর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা সহ আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া পরিচালিত মাদরাসাণগ্ধমৎভ প্রয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া সংগঠনের কর্মিদের অপরিহার্য দায়িত্ব। প্রয়োজন ও সামর্থ অনুসারে নুতন মাদরাসা কায়েমের প্রয়াস চালানো আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। শাহেন শাহে সিরিকোট রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি বলেছেন, ‘মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো মাদরাসা কো দেখো, মুঝসে মুহাব্বাত হ্যায় তো মাদরাসা কো মুহাব্বাত করো’’। সাচ্চা আলেম তৈরীর এসব মারকাজগুলোকে যে যতবেশি মুহাব্বাত সহকারে লালন পালন করবে সে ততবেশি ত্বরিকতের সুফল লাভ করবে- এতে কোন সন্দেহ নেই।

খানক্বাহ্ প্রতিষ্ঠা
‘‘মাদরাসা সে আলেম নিকেলতে আউর খানকাহ্‌সে ঐলী নিকেলতে হ্যায়’’ মাশায়েখ হযরতের এই বাণীঞ্চর সফল বাস্তবায়নে আমাদেরকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি খানাকাহ্‌ প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে ও গুরুত্ব দিতে হবে। সম্ভাব্য সকল উপজেলায় অন্তত একটি খানকাহ্‌ প্রতিষ্ঠা সিলসিলাহঞ্চর কর্মকাণ্ডকে মজবুত এবং দীর্ঘস্থায়ী করে রাখতে অত্যন্ত জরুরি। আজ এখানে কাল ও খানে করে সিলসিলাহঞ্চর নিজস্ব কর্মকাণ্ড ধরে রাখা সহজ নয়। তাই দরকার নিজস্ব আধ্যত্মিক মারকাজ ‘খানকাহ্‌ শরীফ’। নিয়মিত খতমে গাউসিয়া, গেয়ারভী শরীফ, তরবিয়াতি মজলিশ, পীর ভাই-বোনদের যোগাযোগ রক্ষা, এমনকি সংগঠনের দফতর হিসেবেও এ প্রতিষ্ঠানটির কোন বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগত পীর-দরবেশদের প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল খানকাহ্‌ নামক আস্তানা। তারপরই মসজিদ, তারপর মাদরাসা। আমাদের গাউসিয়া তারবিয়াতি মজলিস’র নিয়মিত আয়োজন এ সব খানক্বাহ্ অন্যতম দায়িত্ব হয়ে ওঠতে পারে। খানক্বাহ্গুলো শরিয়ত-তরীক্বতের শিক্ষা-প্রশিক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল আদিকালে- এখনও হয়ে ওঠতে পারে সে ঐতিহ্যের পথ ধরে।
আনজুমানের আনুগত্য
‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ মূলত আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার অংগ সংগঠন। তাই সর্বক্ষেত্রে আনজুমানের  আনুগত্য করা এবং আনজুমান প্রদত্ত নিয়মিত ঐ অনিয়মিত, তাৎক্ষণিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়া আমাদের দায়িত্ব। শাহৎনশাহে সিরিকোট বলেছেন, ‘‘আনজুমান চালানা হুকুমত চালানা।’’ হুযূর কেবলা তাহের শাহ্‌ মাদ্দাযিল্লুহুল আলী বলেছেন- ‘‘হুকুমত কেলিয়ে ফৌজ কা জরুরত হ্যায়- গাউসিয়া কমিটি আনজুমান কী ফৌজ হ্যায়’। তাই বর্তমানে গাউসিয়া কমিটির প্রত্যেকটি কর্মি আনজুমানের একেকজন ফৌজ বা সৈনিক। ইনশাল্লাহ, ‌ আমাদের জন্য এমন এক শুভদিন অপেক্ষা করছে- যেদিন এই ফৌজরা মিলিত হবে ইমাম মাহদী আলায়হিস্‌ সালামের ফৌজদের কাফেলায়। হুজুর গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্‌ রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি বলেছেন- ‘মেরে বাচ্চা মাহ্‌দী আলায়হিস্‌ সালাম কী ফৌজ বনেঙ্গে আউর দাজ্জাল কে সাথ  জেহাদ করেঙ্গে’।
সমাজ সেবা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, মানুষের মৌলিক প্রয়োজন- জ্ঞঅন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাঞ্চর ব্যবস্থা করবে সরকার। এরপরও মানুষ-মানুষের জন্য । যেহেতু ত্বরঃকত -মানব সেবাঞ্চর প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছি শুরু থেকেই। বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের বিভিন্ন কমিটি দাতব্য চিকিৎসা, অন্ন-বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সহ সম্ভাব্য সব সেবা মূলক কাজে অংশ নিতে হবে। মানুষকে জাগতিক সেবা দিলে তারা সহজেই আধ্যাত্মিক সেবা নিতে অনুপ্রাণিত হবে- এটাই স্বভাবিক।
জশনে জুলূস ও বার্ষিক মাহফিল
এ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সংস্কার জ্ঞজশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবীঞ্চ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। আর এর রূপকার হলেন গাউসে জামান সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্‌ রাহমাতুল্লাহি তাঞ্চআলা আলায়হি-যিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। চট্টগ্রামে ১২ রবিউল আউলয়াল এবং ঢাকায় ৯ রবিউল আউয়াল অনুষ্ঠিতব্য জশনে জুম~লকে সর্বাত্মক সফল করার দায়িত্ব আমাদের। এজন্য অন্তত: তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার প্রত্যেকটি কমিটিকে। সাথে সাথে স্থানীয়ভাবে প্রয়োজন নতুন নতুন জশনে জুলুছঞ্চর জন্ম দিতে হবে। জেলায় জেলায়, শহরে-বন্দরে, গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে এ সংস্কৃতিকে।
এছাড়া ১১ রবিউম আখির গাউসুল আশবম যৎহক আবদুল ঔাাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র ওরস শরীফ- ফাতেহা-আ এয়াবদাহুম, ১১ জিলক্বদ শাহৎনশাহে সিরিকোট রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র ওরস শরীফ,  অৎভ ১৫ জিলহজ্ব গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্‌ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি’র ওরস শরীফসহ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অন্যান্য সব বার্ষিক আয়োজনের প্রয়াস চালাতে হবে। যেমন মহররম মাসে শোহাদায়ে কারবালা স্মরণে, ২২ জুমাদাল আখিরাহ্ ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র স্মরণে মাহফিল আয়োজন করা যেতে পারে।
প্রকাশনাগুলোর প্রচার- প্রসার
আনজুমানের প্রকাশনাগুলোকে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া আমাদের অন্যতম দায়িত্ব-কর্তব্য। গাউসে দাঁওরা খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি’র লিখিত ৩০ পারা দুরূদ প্রন্থ মজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু তাঞ্চআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইসলামি দুনিয়ার এক বিরল সম্পদ। এটি বর্তমানে বাংলায় উচ্চারণসহ তরজমা হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। ৩০ পারা ক্বোরআন এবং সহীহ্ বুখারী শরীফের পর ৩০পারা সম্বলিত এমন উচ্চাঙ্গের আধ্যাত্মিক খনির আধার সম্পর্কে এখনো ইসলামি জগত বেখবর বলা চলে। অথচ, এ কেতাবের মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের সিলসিলাহঞ্চর বিশালতা, গভীরতা এবং রূপ-মাধুর্য।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৬ তারিখে গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্‌ রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘মাসিক তরজুমান’ ১ জানুয়ারী ১৯৭৭ থেকে যাত্রা করে অদ্যৎবধি ইসলামের মূলধারার প্রচার-প্রসারে বিশেষ অবদান রেখে অৎলগ্ধচ।
গাউসিয়া তারবিয়াতি নেসাব’ শরিয়ত ঐ শরিয়ত ও তরীক্বতের যাবতীয় মৌলিক জ্ঞান, আক্বিদা, আমল ঐ আখলাক্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে একজন সত্যিকারের মু’মিন-মুসলমান হয়ে কবরে যেতে হতে পারে আমাদের নিত্যসঙ্গী। সিলসিলাহঞ্চর যাজরা শরীফ প্রত্যেক পীর-ভাই বোনদের মুখস্থ থাকা উচিত। ‘আওরাদুল ক্বাদেরিয়াতুর রহমানিয়া’ গ্রন্থটি সিলসিলাহ’র মাশায়েখ হযরাতে কেরামের দৈনিক ঐবঃধা সংকলন – যা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান হিসেবে কাজে লাগতে পারে। এছাড়া রয়েছে আনজুমানের প্রকাশনা বিভাগের অনেকগুলো নিয়মিত-অনিয়মিত গ্রন্থ- যা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমাদেরই। এ আখেরী যুগে ঈমান-ইসলামের সংরক্ষণে প্রকাশণাগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং এ প্রকাশনাগুলোর স্বাদ গ্রহণ করে প্রথমত আমরা নিজেভৎ উপকৃত হবো এবং সাথে সাথে অন্যদেরও উপকৃত করার নিরন্তর প্রয়াস চালাতে হবে।
উপরোক্ত কর্মকাণ্ডগুলোর সাথে সাথে আমাদের রয়েছে ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র গঠনতন্ত্রে বর্ণিত কর্মসূচিসমূহ। গঠনতন্ত্রে বর্ণিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কর্মসূচির আলোকে যুগের দাবী এবং যে কোন পরিস্থিতির প্রয়োজনে কেন্দ্রিয় কমিটি এবং আনজুমান ট্রাষ্ট’র পরামর্শ, নির্দেশ এবং অনুমোদনক্রমে আরো বহু কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আমাদের পৃষ্ঠপোষক তথা দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন হযরাতে কেরামের নির্দেশ এবং পরামর্শক্রমে এ সংগঠন এগিয়ে যাবে নিত্য-নতুন খিদমত কৌশল গ্রহণ করে।
এ সাথে উল্লেখ্য যে, এই সংগঠনের কেন্দ্রিয় দফতর বাংলাদেশের চ-গ্রামে অবস্থিত
হলেও কর্মপরিধি বর্তমানে বাংলাদেশ অতিক্রম করে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্নদেশে সম্প্রসারিত হয়েছে। হযরত বড় পীর গাউসুল আঞ্চযম আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি তাঞ্চআলা আলায়হিঞ্চর গাউসিয়্যতের সমগ্র সীমানা জুড়ে এ মিশনকে পৌঁছিয়ে দেওয়া আমাদের ংফযথ। গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তাঞ্চআলা আনহু বলেন,
বেলাদুল্লাহি মুলকী তাহতা হুকমী
ওয়া ওয়াক্বতি ক্বাবলা ক্বাবলি- ক্বাদ সাফা-লী
 [ক্বাসীদা-আ গাউসিয়া]
ইনশাল্লাহ্‌ একদিন বিশাল রাজ্যব্যাপী চলবে এ দ্বীনি মিশনের কাজ, যার রূহানী নেতৃত্ব আসবে সে পর্বত শীর্ষের সাজ্জাদানশীন হযরাতের পক্ষ থেকে -গাউসিয়্যতের আদর্শবাহী সে পতাকা পত্ পত্ করে উড়ছে সে পর্বতের শিরোপরি। ‘ওয়া আ’লা-মী আলা- রা’সিল জেবা-লী।’ সত্যিই, আজ সে পর্বত চূড়া থেকেই আসছে গাউসিয়াতের এ মহামিশনের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব। বর্তমানে এ নেতৃত্বে আছেন হযরত কেবলা তাহের শাহ্‌ (মা.জি.আ.)। তাঁর সাথে এ এ মিশনের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করছেন হযরতুল আল্লাম্ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ.)
এ প্রসঙ্গে শবভণ আল্লামা সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তাজ্ঞআলা আলায়হিশভ ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, জ্ঞসাবির শাহ পাকিস্তান কা লিডার হোগা আউর বাঙ্গালকা পীর হোগা’।
ইসলাম ও গাউসিয়া কমিটির অগ্রযাত্রায় তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ইত্যাদি থেকে শাহানশাহে সিরিকোটের এ মহান ভবিষ্যৎদ্বাণীর বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আসুন `গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র সদস্য হয়ে এ মহামিশনে নিজেকে শামিল করি। নিশ্চিত করি দুনিয়া আখেরাতের উচ্চতর সম্মান-শান্তি ও কল্যাণ। আ-মঃ-ন! বেহুরমতে সাআয়্যদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
 বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন https://www.facebook.com/GausiaCommitteeRaozanUniversityBranch

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫

শাহেন শাহে সিরিকোট এবং তার জীবন্ত কারামত “জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া

শাহেনশাহে সিরিকোট এবং তাঁর জীবন্ত কারামাত জামেয়া

 মোছাহেব উদ্দীন বখতিয়ার
 সিরিকোট শব্দটি বিবর্তিত হয়েছে ‘সের-ই-কোহ্’অর্থাৎ পর্বতশীর্ষ শব্দ থেকে। বর্তমান পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশের যে পাহাড়-পর্বতঘেরা অঞ্চলের সর্বোচ্চ স্থানে এই জায়গাটি রয়েছে এর নাম ‘কোহে গঙ্গর’অর্থাৎ গঙ্গর উপত্যকা। শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এ পাহাড় দেশের উপরে আরো উপরে যাওয়ার পর শীর্ষেই সিরিকোট শরীফ। গাউসে যামান, পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মাযার শরীফ ঠিক এখানেই। একদিন পাহাড় ঘেরা এই অঞ্চলের মাথার ওপরই হয়েছিল তাঁর জন্ম। যেখান থেকে আজ সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া তথা শাহেনশাহে বাগদাদ গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী রদিয়াল্লাহু আনহুর পতাকা হাতে তিনি আমাদের এই অঞ্চল পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিলেন। এই গঙ্গর উপত্যকা এক সময় ছিল অমুসলিমদের অধিকারে। এর অন্ধকার দূর করতেই একদিন সেখানে স্থায়ী আস্তানা স্থাপন করেছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষগণ। তাঁরা এর পূর্বে আফগানিস্তান এসেছিলেন বাগদাদ শরীফের নিকটস্থ ‘আউস’নামক অঞ্চল থেকে। এরও আগে তাঁদের ঠিকানা ছিল মদীনা শরীফ। তাদের যে মহাত্মা পূর্বপুরুষ সর্বপ্রথম ৪০০ হিজরীতে ইসলাম প্রচারের কাজে আফগানিস্তান এসেছিলেন তাঁর নাম ‘হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ গীসুদারাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি’। ইমাম হুসাইন রদিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর এই আওলাদে রসূলর বংশধরগণ সমগ্র আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশব্যাপী বসতিস্থাপন করেছে শত শত বছর ধরে এবং এদের মধ্যে শত শত অলি আল্লাহ্ ছিলেন যাঁদের হাতে উক্ত এলাকায় সেই সময় (৪০০-৪২১ হিজরী) থেকে এ পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল ইসলামের এক বিশাল খিদমত হয়ে আসছে।
ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারে সফলতা এনেছিলেন হযরত খাজা গরীবে নাওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। অথচ, এরও শত বর্ষ আগে শাহেনশাহে সিরিকোট রহমাতুল্লাহি আলাইহির পূর্বপুরুষ গীসুদারাজ আওয়াল এখানে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে ছিলেন। আজও তাঁর বংশধরগণ ইসলামের বিশাল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন পূর্বপুরুষদের মতো। বিগত শতাব্দিতে তাঁর যে উত্তরাধিকারের হাতে ইসলামের এক বিশাল উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৩৯তম অধঃস্তন বংশধর। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি (১৮৫৭-১৯৬১ খ্রি.)। পারিবারিক তত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা, নিকটস্থ পাঞ্জাবের ছসজিলআটকের একটি মাদরাসা থেকে হিফজ শেষ করে তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোরআন-সুন্নাহর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে প্রাতিষ্ঠানিক সর্বশেষ সনদ অর্জন করেন ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষেই তিনি একই মাসওয়ানী আওলাদে রসূল পরিবারের এক মহীয়সী কন্যা সৈয়্যদা খাতূনের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর এক পর্যায়ে বংশীয় ঐতিহ্য অনুসরণ করে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে তিনি হালাল ও সুন্নতি রুজির জন্য ব্যবসায় এবং স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ বেদ্বীনদের মধ্যে দ্বীনি তাবলীগ শুরু করে এতটা সফল হয়েছিলেন যে, দলে দলে এক বিশাল জনগোষ্ঠী তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়। হযরত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্ততঃ ১৬ বছরের মতো অবস্থান করে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ্টাউন, মোম্বাসা, জাঞ্জিবারসহ বিভিন্ন এলাকায় সফলভাবে ইসলাম প্রচার শেষে দেশে ফিরে আসবার প্রাক্কালে নবদীতি মুসলমানদের জন্য ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সেখানকার সর্বপ্রথম জামে মসজিদটি নিজ হাতে নির্মাণ করে আসেন। যা, ড. ইব্রাহীম এম. মাহ্দী রচিত ‘এ শর্ট হিস্টোরী অব মুসলিমস ইন সাউথ আফ্রিকা’গ্রন্থসূত্রে পাওয়া যায়। পাকিস্তানের  কয়েকজন খ্যাতনামা লেখক ও দ্বীনী ব্যক্তিত্ব যেমন- আল্লামা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আল্লামা সৈয়দ আমির শাহ্ জিলানী, প্রফেসর ড.মাসঊদ আহমদসহ অনেকেই তাঁর আফ্রিকায় ইসলাম প্রচার বিষয়ক তথ্য তাঁদের গ্রন্থে তুলে ধরেছেন।
আফ্রিকা থেকে ফিরে এসে তাঁর তাপসী বিবি সৈয়্যদা খাতূনের প্রেরণায় এক সময় পৌঁছে যান তাঁর পীর গাউসে দাওরাঁ খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সান্নিধ্যে। প্রথম দর্শনেই অন্যন্ত দূরদর্শী চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হীরক খন্ডকে দেখে তাঁর ভিতরের হুসাইনী রক্তের মহাশক্তি সম্পর্কে টের পেয়ে যান এবং অত্যন্ত হিকমত সহকারে বুকে টেনে নেন। হরিপুর বাজারে কাপড়ের দোকান এবং নিকটস্থ দরবারের পীর খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাক্ষতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতেই পথিমধ্যে এক তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎ ঘটে গেল দু’জনায়। যেন দু’জনেই দু’জনকে ঠিক ঠিক চিনে ফেললেন। যদিওবা ইতোপূর্বে কখনো দেখা হয়নি।
দরবারের বাইরে কাজে ব্যস্ত নূরানী লোকটিকে দেখে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললেন হযরত সিরিকোটী। আর উত্তরে এক বিশেষ চাহনী ভঙ্গি এবং সূরে খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন ‘ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহূ’। শুধু সালামের জবাব দিয়ে শেষ করেন্ নি, এরপরই জিজ্ঞেস করলেন, ‘চান্দে কেত্তে আয়ে’ পাঞ্জাবী ভাষার এই কথার অর্থ হলো, এই চাঁদের মতো মানুষটি আপনি কোত্থেকে এসেছেন?। চাঁদ বদন এ আউলাদে রসূল উত্তর দিলেন। ‘গঙ্গর ছে’ অর্থাৎ গঙ্গর উপত্যাকা থেকে এসেছি। কি করেন, কেন এসেছেন জিজ্ঞেসে তিনি উত্তর দিলেন যে, নিকটস্থ হরিপুর বাজারে একটি দোকান দিয়েছেন নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রতি উত্তরে চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তাহলে তো ভালো কথা, আমি আমার লোকদের বলে দেবো যে, হরিপুর বাজারে ‘আমার’ একটি দোকান আছে এবং তারা যেন সেখান থেকে কেনাকাটা করে। সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ক্রমশই দুর্বল হতে লাগলেন চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র এক একটা কথা শুনতে শুনতে। যেন বড়ই আপনজন। এবার সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী করছিলেন এখানে? উত্তর এলো একটি নয়া মসজিদ তৈরির কাজ করছিলাম। সিরিকোটী হুজূর পকেট থেকে একটি টাকা বের করে তাঁর হাতে দিলেন এবং বললেন এ দ্বীনী কাজে তাঁকে শরীক করতে। খুব আগ্রহ সহকারে এই টাকা কবুল করে মুনাজাত করলেন খাজা চৌহরভী। এভাবে শুরু হল প্রথম দিনের রহস্যভরা কথোপকথন এবং তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎ পর্ব। ……. তাই প্রথম দিনেই যেন অর্ধেক কাজ হয়ে গেল। এতোদিন যাঁর দরবারে আসতে এতো আপত্তি আজ থেকে সে দরবার ছাড়া যেন জীবনই অসার হযরত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর। পোশাকী ব্যবসা লাটে ওঠল আর জমে ওঠল প্রেম বাজার আর সেই বাজারে আল্লামা সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেকে বিক্রি করে দিলেন চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির করতলে। নিজের বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট রাখলেন্ না। আমিত্ব, অহঙ্কার ধুলোয় মিশে গেল। ১৮ মাইল দূরে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে সিরিকোটের পাহাড় থেকে লাকড়ি নিয়ে নিজ কাঁদে করে পৌঁছাতেন চৌহর শরীফের লঙ্গরখানায়। এভাবে বহু বছর একটানা। এই প্রেম বাজারের বাইরের দর্শকরা এমন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব সৈয়্যদ জাদা, বিখ্যাত আল্লামা, হাফেজ, ক্বারী অধিকন্তু আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসায়ীর ঘাড়ে লাকড়ি দেখে কেউ হাসলো, আবার কেউ আফসোস করলো, কেউ হলো হতবাক। ফানাফিস্ শায়খ এর স্তর অতিক্রম করে ‘ফানা ফির রসূল’র স্তরে উন্নীত হতে তিনি দেহ-মন-আত্মা দিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে নেমেছিলেন যেন। শুধু দুনিয়াবী লোভ-লালসা নয়, এমনকী বহির্জগতের মোহ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন পীরের ভালবাসার কাছে। এ জন্য হযরত খিজির আলাইহিস্ সালাম এর মত এক বিরল আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকে হাতের কাছে পেয়েও তিনি ভ্রুপেও করেন্ নি সেদিকে। কারণ, তাঁর পীর খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ই হয়ে ওঠেছিলেন তাঁর জীবন-মরন-আখিরাত সবকিছু। পীর খাজা চৌর্হভী রহমাতুল্লাহি আলাইহির প্রতি তাঁর আত্ম্যোৎসর্গ কোন পর্যায়ের তা বুঝানোর জন্য উপমহাদেশের খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ এবং শতাধিক গন্থের প্রণেতা আল্লামা আবদুল হাকিম শরফ কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,  আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘শরহুল হুকূক’নামক গ্রন্থের উর্দূ অনুবাদের ভূমিকায় প্রসঙ্গক্রমে বলেন, হযরত সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পীরভক্তি ছিল ঠিক সেই মজযূব অলীর মতোই যে কিনা হযরত নিজাম উদ্দীন মাহবূবে ইলাহী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র পালকীর নিচে অবস্থান নিয়েছিল। কথিত আছে, উক্ত মজযূব একটি মাসআলার উত্তর জানতে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এমন এক ব্যতিব্যস্ত অবস্থায় নিজাম উদ্দীন মাহবূবে ইলাহী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পালকিতে চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। উক্ত মজযূব এ সময় কোন এক কারণে তাঁর পালকীর নিচে আশ্রয় নিতেই উক্ত মাসয়ালাটির উত্তর তাঁর জানা হয়ে যায় এবং সাথে সাথে উক্ত মজযূব অত্যন্ত সন্তুষ্ট ও উৎফুল্ল চিত্তে বলে ওঠেন যে, আমার পীর সাহেবের বদৌলতেই এই নেয়ামত লাভ করেছি। অর্থাৎ এটা মাহবূবে ইলাহী নয় বরং তাঁর পীরের মেহেরবানী ছিল। প্রকৃত অর্থে, সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহিও নিজেকে সম্পূর্ণরূপে পীরের জন্য এমনভাবে উৎসর্গ করেন্ যে, শেষ পর্যন্ত পীর আর তাঁর সম্পর্ক হয়ে যায় দেহ আর প্রাণের সম্পর্কের মতো। সূফী কবির ভাষায়- মান তূ শুদম তূ মান শুদী, মান তন শুদম তূ জাঁ শুদী, তু কছ না গুয়দ বা‘দ আযীঁ, মান দীগরম তূ দি গরী। অর্থাৎ তুমি আমি হলে, আমি হলাম তুমি; আমি শরীর হলাম আর তুমি হলে প্রাণ; কেউ আর না বলে যেন তুমি আর আমি পৃথক সত্ত্বা।’’ এ কথাটি চৌর্হভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেও তাঁর আখেরী চিঠিতে সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন- যখন সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পীরের অবর্তমানের অসহায়ত্বের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে- ইঞ্জিন থেকে বগি আলাদা হয়ে গেলে বগির অবস্থা কি হবে? খাজা চৌর্হভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উত্তরে বললেন- ‘মান তু শুদম’ কবিতাটি, অর্থাৎ কে বলছে তুমি আর আমি দু’জনা। সত্যিকার অর্থেই সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র প্রধান খলিফাই ছিলেন্ না বরং ছিলেন তাঁর সফল রহস্য ও ফুয়ূজাতের উৎস স্থল- (আল্লামা শরফ কাদেরী)। আপন মুর্শিদের সন্তুষ্টি এবং আধ্যাত্মিক মতা অর্জনের মাধ্যমে তিনি যখন শরীয়ত-তরীকতের এক বিশাল মিশনের নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন করলেন, তখন তাঁকে খাজা চৌহরভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নির্দেশ দিলেন এই মিশন নিয়ে রেঙ্গুন যেতে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে যখন সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন তখন তাঁর বয়স ষাটের উপর। এমন বয়সে মানুষ বিদেশ থেকে ঘরে ফিরে আসে। জীবনের শেষ সময়ে একটু বিশ্রাম নিতে। অথচ তিনি করলেন উল্টোটা। আশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রেঙ্গুনে থেকে এবং শত বছর বয়স পর্যন্ত চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করে সুন্নিয়ত ও সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার এক নজির বিহীন খিদমত আঞ্জাম দেন।
১৯২০ থেকে ১৯৪১ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ বাইশ বছরে রেঙ্গুনের হাজার হাজার স্থানীয় বার্মিজ নাগরিক এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসে কর্মরত প্রবাসীদের মধ্যে অসংখ্য অমুসলিম-মুসলিম নির্বিশেষে তাঁর আধ্যাত্মিক ও অলৌকিক আকর্ষণে উপকৃত হয়েছিলেন। এদের কেউ ভিন্ন ধর্ম থেকে ইসলামে আবার কেউ অন্ধকার জীবন থেকে আলোর দিকে ফিরে এসেছিলেন। রেঙ্গুনের বিখ্যাত বাঙালী মসজিদের ইমামত ও খেতাবতের পাশাপাশি রেঙ্গুনসহ সমগ্র ব্রহ্মদেশে সত্যিকারের দ্বীন ও তরীক্বতের প্রসার ঘটাতে সম হয়েছিলেন যা এখনো পর্যন্ত সেখানে বিদ্যমান। এ সময় সমগ্র রেঙ্গুনে তাঁর অসংখ্য কারামাতের কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং দলে দলে লোকজন তাঁর কাছে এসে দুনিয়া-আখিরাতের অমূল্য নিয়ামত লাভে ধন্য হয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের অপ্রতিদ্বন্ধি মুজাহিদ আলেমে দ্বীন, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আযীযুল হাক্ব শেরেবাঙালা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রেঙ্গুন সফরের সময় কুতুবুল আউলিয়া, গাউসে যামান আল্লামা শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে লোকজনের কাছে জানতে পেরে বাঙালি মসজিদে গিয়ে তাঁর সাথে মুলাক্বাত করেন এবং দীর্ঘণ আলাপ-আলোচনা ও পর্যবেণের পর তাঁর মধ্যে বিশাল বেলায়তী মতা অবলোকন করে তিনি তাঁকে চট্টগ্রামে তাশরীফ আনার জন্য অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের সংবাদ শিল্পের পুরোধা দৈনিক আজাদী’র প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার আবদুল জলিলসহ চট্টগ্রাম নিবাসী তাঁর অসংখ্য মুরীদের আবেদন-নিবেদন উপো করতে না পেরে পরবর্তীতে ১৯৩৫-৩৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি রেঙ্গুন থেকে পাকিস্তান যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে কিছু দিনের জন্য যাত্রা বিরতি করতেন। এ কয়েক দিনের যাত্রা বিরতিতে ও তাঁর অলৌকিক শক্তির আকর্ষণে এখানকার মানুষ আকষ্ট হতে থাকে এবং এখানে তাঁর মুরীদ’র সংখ্যা বাড়তে থাকে দিন দিন।
এভাবে, ১৯৪১ এর শেষ দিকে এসে তিনি রেঙ্গুন থেকে স্থায়ীভাবে এই মিশন নিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল এবং বার্মা ছিল অত। কিন্তু আল্লাহর এ মহান অলী হযরত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর অলৌকিক অদৃশ্য শক্তিতে দেখলেন যে, শিগগিরই রেঙ্গুন শহরে বোমা হামলায় তছনছ হয়ে যাবে এবং অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটবে।  তিনি তাঁর মুরীদ এবং পরিচিত সকলকে দ্রুত রেঙ্গুন ত্যাগের নির্দেশ দেন এবং নিজেও রেঙ্গুন ছেড়ে চলে আসেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, বর্তমানে রেঙ্গুনে বিদ্যমান গাউসে জমান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর খলিফা ইসমাঈল বাগিয়া সাহেব জানান যে, তাঁর আব্বা হাফেজ মুহাম্মদ দাঊদ জী বাগিয়া উক্ত নির্দেশ পেয়ে ৮ ডিসেম্বর ১৯৪১ তারিখে তাদের পুরো পরিবার নিয়ে রেঙ্গুন ছেড়ে লৌèৌতে নিজ দেশে ফিরে আসেন। অন্যান্যরাও চলে যান যার যার দেশে। আর ২৩ ডিসেম্বর ১৯৪১ তারিখে রেঙ্গুন শহরে বোমা বর্ষণ শুরু হয়। অপর একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় যে, শেষের দিকে হুজূর কেবলা সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রেঙ্গুন ছাড়বার সময় তাঁর খাদেম ফটিকছড়ি নিবাসী মরহুম ফজলুর রহমান সরকারকে রেখে আসেন তাঁকে হুজূর কেবলার বিছানায়। আরো তিন দিন থাকার পর রেঙ্গুন ছাড়ার পরামর্শ দেন। ফজলুর রহমান সরকার নির্দেশমত তিন দিন থেকে চলে আসেন এবং এর পরপরই বোমা বর্ষণ শুরু হয়। যারা হুজূর কেবলার নির্দেশ মেনে এবং বিশ্বাস করে রেঙ্গুন ছেড়েছিল তাদের সকলের প্রাণ বেঁচে যায় এবং সম্পদও রা পায় অনেকাংশ। আর অন্যদের অবস্থা হয় বিপরীত ধরণের। শেষ পর্যন্ত সকলকেই রেঙ্গুন ছাড়তে হয়েছিল যুদ্ধের ভয়াবহতা শুরু হবার পর, কিন্তু তাদের কেউ আর স্বাভাবিক এবং সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পারেনি। হেটে হেটে আসবার সময় অনেকে পথিমধ্যেই ক্ষুধায় এবং শক্তিহীন হয়ে মারা যান।
যা হোক, তাঁর রেঙ্গুন জীবনের শুরুতে ১৯২৪ সালের দিকে তাঁর পীর খাজা চৌর্হভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে স্থলাভিষিক্ত করে শরীয়ত-তরীক্বতের বিশাল দায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিক মতা প্রদান করে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন। পীরের ইন্তিকালের পরপরই তিনি উক্ত অর্পিত দায়িত্বাবলী যথাযথভাবে আঞ্জাম দেয়ার লক্ষে তাঁর পীরের নামেই একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
১৯২৫ সনের ১৫ ফেব্র“য়ারী ‘আন্জুমান-এ-শুরায়ে রহমানিয়া’ নামক এই সংস্থা স্থাপিত হলে খাজা চৌর্হভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রতিষ্ঠিত হরিপুরস্থ রহমানিয়া মাদরাসা পরিচালনা, তাঁর রচিত ৩০ পারা বিশিষ্ট দরূদ শরীফের অদ্বিতীয় কালজয়ী গ্রন্থ ‘মাজমুয়ায়ে সালাওয়াতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ প্রকাশনা সহ যাবতীয় দায়িত্ব এ সংস্থা কর্তৃক সুচারুরূপে পরিচালিত হতে থাকে। ‘আন্জুমান-এ-শুরায়ে রহমানিয়া’রেঙ্গুন’র চট্টগ্রাম শাখা স্থাপিত হয় ১৯৩৭ সনের ২৯ আগস্ট একই উদ্দেশ্য আঞ্জাম দেয়ার প্রয়োজনে। শুরুতে এ সংস্থা  রেঙ্গুনের শাখা হিসেবে কাজ শুরু করলেও ১৯৪২ থেকে চট্টগ্রামের এই সংস্থাই হয়ে ওঠে হুজূর কেবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র মিশনের প্রধান অবলম্বন। ১৯৪২-১৯৫৪ পর্যন্ত অন্তত: ১২ বছর পর্যন্ত এই সংস্থার মাধ্যমেই চট্টগ্রাম থেকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হতো হরিপুরের রহমানিয়া মাদরাসার জন্য। সুন্নিয়ত ও তরিক্বতের অন্যান্য কাজও এ সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। পঞ্চাশের দশকে এসে  বাঁশখালির শেখেরখীলের এক মাহফিলে দরূদ শরীফ বিরোধীদের বেআদবীপূর্ণ আচরণের প্রতিক্রিয়ায় সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি চট্টগ্রামে এদের মোকাবেলার জন্য একটি শক্তিশালী মাদরাসা কায়েম করার ঘোষণা দেন। ১৯৫৪ সনের ২২জানুয়ারী এই নয়া মাদরাসা বাস্তবায়নের জন্য গঠিত হয় ‘আন্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ নামক অপর এক সংস্থা। সিরিকোটী হুজূরের উপস্থিতিতে এই নয়া আন্জুমানের ১৭ ফেব্র“য়ারী ১৯৫৪ তারিখের এক ঐতিহাসিক সভায় প্রস্তাবিত মাদরাসার নাম রাখা হয় ‘মাদরাসা-এ-আহমদিয়া সুন্নিয়া’ ২৫ জানুয়ারী ১৯৫৬ তারিখের এক সভায় এ মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার লক্ষে মাদরাসার নামের সাথে “জামেয়া” (বিশ্ববিদ্যালয়) শব্দটি যুক্ত করে এ মাদরাসার নাম রাখা হয় ‘ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’। চট্টগ্রামের ষোলশহরে স্থাপিত এই মাদরাসা আজ অর্ধশতাব্দিকাল ধরে দেশে সুন্নিয়তের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। ১৮ মার্চ ১৯৫৬ তারিখে ইতিপূর্বে গঠিত আন্জুমান দ্বয়ের পরিবর্তে ‘আন্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’ নামক নতুন একক আন্জুমান প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই আন্জুমান দেশের প্রধান বেসরকারী দ্বীনী সংস্থা হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। আন্জুমান পরিচালিত এই ‘জামেয়া’কে এশিয়ার অন্যতম খ্যাতনামা সুন্নি মারকাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জামেয়ার এতটুকু সফলতার কারণ হলো এই প্রতিষ্ঠানটি আল্লাহর দরবারে কবূল হয়েছে।
জামেয়া প্রতিষ্ঠার প্রোপট এবং ল্য বিবেচনায় দেখা যায়- বাঁশখালীর এক মাহফিলে হুজূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র দরূদ-সালামকে ইনকার করার তীব্র প্রতিক্রিয়া হিসেবে এদের বিরুদ্ধে আদর্শিক মেধাভিত্তিক লড়াইয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবেই তৎকালীন ‘নয়া মাদরাসা’ এই জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জায়গা নির্ধারণ, ভিত্তি স্থাপন থেকে শুরু করে এর যাবতীয় পদপে নেয়ার ক্ষেত্রে হযরত সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেন অদৃশ্য কারো ইঙ্গিতের অনুসরণ করছিলেন। তাঁর ঘোষণা অনুসারে “শহর ভি নাহো, গাঁও ভি নাহো, মসজিদ ভি হ্যায়, তালা-ব ভি হ্যায়” এমন ধরণের জায়গাটি যখন অনেক যাঁচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ বর্তমানের মাদরাসা এলাকাটি নির্ধারণ করা হয়। তখন এর মাটি থেকে ইলমে দ্বীন’র সুগন্ধি পাওয়া গিয়েছিল।
এই মাদরাসার পৃষ্ঠপোষকতা কে কোত্থেকে করবেন সে সম্পর্কে তিনি অনেক রহস্যময় মন্তব্য করেছিলেন। কেয়ামত পর্যন্ত এই মাদরাসা পরিচালনার ভার স্বয়ং আল্লাহর প্রিয়  হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহণ করেছেন বলে তিনি তাঁর মুরীদদের অভয় দেন। তিনি বলেন- “আমার কানে আওয়াজ আসছে যে, ইয়ে নয়া মাদরাসা হাম খোদ চালাওঙ্গা” অর্থাৎ এই নতুন মাদরাসা আমি নিজেই চালাবো। সত্যিকার অর্থেই এই মাদরাসা চলছে যেন অদৃশ্য শক্তির ব্যবস্থাপনায়। টাকা-পয়সা যখন যা প্রয়োজন তা ভাবনা-চিন্তা করতে না করতেই চলে আসছে। শুধুমাত্র মাদরাসার টাকা নেয়ার জন্যই আজ আলাদা অফিস খুলে বসতে হয়েছে। কত চেনা-অচেনা লোক এসে হাদিয়া, সদক্বা, মান্নত, নিয়্যতের টাকা, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদির টাকা দিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। মান্নতকারীদের আশাভঙ্গ করেনা এই জামেয়া -তাই, আজ জামেয়া মান্নত পূর্ণ হওয়ার কথা মানুষের মুখে মুখে। শাহ্ সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছিলেন- “মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো, জামেয়া কো দেখো, মুঝসে মুহাব্বত হ্যায় তো, জামেয়া কো মুহাব্বত করো।”ভ্রান্ত মতবাদীদের বিরুদ্ধে ইসলামের মূলধারা সুন্নিয়তকে বিজয়ী করতে ইশ্ক্বে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র ভিত্তিতে এই মাদরাসা তৈরি করেছিলেন। ফলে, আজ ভেজাল থেকে আসল ইসলামকে রার অতন্দ্র প্রহরী ‘সাচ্চা আলেম’ বের হচ্ছে এই মাদরাসা থেকে।
আল্লামা সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জামেয়ার কারিকুলাম সম্পর্কে বলেন, এই মাদরাসায় প্রয়োজনীয় সকল ভাষাজ্ঞানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়গুলোর উপরও শিা দিতে হবে। তিনি ভবিষ্যতে ইউরোপ-আমেরিকায় ইসলাম প্রচারে সম হয় এমন ইংরেজী ও জ্ঞান বিজ্ঞানে দ সুন্নী আলেম তৈরির জন্য এই জামেয়া প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জামেয়ার সাচ্চা আলেমরা শুধু মোল্লা না হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখায় পারদর্শী হয়ে বহির্বিশ্ব পর্যন্ত যেন ইসলামের সঠিক আক্বীদা ও মূল্যবোধের বিস্তার ঘটাতে সম হন। সিরিকোটী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় বলেছিলেন, তোমরা ত্রিশ বছর পর্যন্ত হরিপুর রহমানিয়া মাদরাসার খিদমত করেছো। তাই, তোমাদের জন্য এই নয়া মাদরাসা (জামেয়া) দেয়া হয়েছে। যদি এই জামেয়ার দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দাও তবে জেনে রেখো, এরপর তোমাদের জন্য আরো অনেক বড় বড় দায়িত্ব অপো করছে। আর এই বড় দায়িত্ব যে ‘হুকুমত’ তাও তিনি কয়েক দফা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, মনে হচ্ছে, এখনো আমরা এই দায়িত্ব কাক্সিতভাবে পালন করতে পারিনি, তাই আজ হুকুমতও আমাদের হাতে নেই। কারণ, হুকুমতের যোগ্য লোক এখনো আমরা তৈরি করতে সম হইনি। তাই, আমাদের এই লক্ষে এগিয়ে যাওয়া উচিত। 

আরো প্রবন্ধ পেতে ক্লিক করুন এখানে : প্রবন্ধ চাই

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫

শুভ নববর্ষ 1437 হিজরী, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ রাউজান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার পক্ষ থেকে সকল কে জানাই আরবী নববর্ষের শুভেচ্ছা।